আমাদের সম্পর্কে

গণমাধ্যমের জগতে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি আর ইন্টারনেটের দুরন্ত গতির তথ্যপ্রবাহ ও মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা—সবকিছু মিলিয়েই বর্তমান সময়ে সংবাদ ও গল্পের সংজ্ঞা যেন নতুন আঙ্গিকে গড়ে উঠছে। বাংলাদেশেও এই নতুন ধারার ছোঁয়া লেগেছে; সেই গতিকে মাথায় রেখেই আত্মপ্রকাশ করেছে ‘the POST’, যা নিজেকে পরিচয় দেয় “বাংলাদেশের প্রথম Meta Non-Fiction নিউ মিডিয়া” হিসেবে। এটি মানুষের গল্পের একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। একটি হিউম্যান স্টোরি হাব, যেখানে বাস্তবতার গভীর ও ইতিবাচক আঙ্গিক তুলে ধরে নতুন সম্ভাবনার কথা বলা হয়।

the POST’-এর মূল লক্ষ্য হলো “নিউজ-ন্যারেটিভ” নির্মাণ। খবর উপস্থাপন করার প্রথাগত রীতিকে বদলে দেওয়া— যেখানে সংবাদের কেন্দ্রে থাকবেন মানুষ ও তাঁদের গল্প। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও তথ্যপ্রবাহ এত বেশি যে অনেক সময় সত্য ও গঠনমূলক সংবাদ খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় ‘the POST’ মানুষের জীবনের বহুমাত্রিক রূপকে উপস্থাপন করে, যাতে পাঠক কেবল খবরই পান না, একই সঙ্গে উপলব্ধি করেন জীবনের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য। এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিক সংযোগ গড়ে তোলার প্রত্যয় ‘the POST’-কে আলাদা করে চেনায়।

‘the POST’ নিজেদেরকে “Meta Non-Fiction” নিউ মিডিয়া হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এই শব্দবন্ধে লুকিয়ে আছে একটি নতুন ধারণা—আসল ঘটনা বা বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্রে রেখে এমনভাবে উপস্থাপন, যেখানে গল্পের নেপথ্যে থাকা মানুষ, তাঁদের অনুভূতির প্রেক্ষাপটও প্রকাশ পায়। যা কোনো কাল্পনিক উপাখ্যান নয়; বরং আসল মানুষ ও আসল পরিস্থিতির গল্প। এই গল্প কেবল বাইরের ঘটনাই নয়, বরং সেটির অন্তর্গত প্রক্রিয়া, মানুষের মানসিকতা, আবেগ ও গভীর উপলব্ধিকে খুব যত্নের সাথে তুলে ধরতে চাই আমরা।

সাধারণত খবর বলতে আমরা বুঝি সংক্ষিপ্ত তথ্য—কী ঘটল, কোথায় ঘটল, কখন ঘটল ও কেন ঘটল। কিন্তু এভাবে কেবল ঘটনা-ধর্মী তথ্য পেয়ে আমরা হয়তো বুঝতে পারি না, এই ঘটনার পেছনে থাকা মানুষরা কী অনুভব করছে, কীভাবে তাঁদের জীবন পাল্টে যাচ্ছে, কিংবা বৃহত্তর সমাজে এর কী ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

পোস্ট সেগুলোই অনুসন্ধান করে।

আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তব জীবনের গল্পকে এমনভাবে বলা, যাতে গল্পের চরিত্ররা রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে পাঠকের সামনে প্রাণ পায়। আর এখানেই ‘the POST’ নিয়ে আসে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা। তথ্য ও গল্পের এমন মেলবন্ধন আমাদের কেবল জ্ঞানসমৃদ্ধই করে না, বরং আমাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে, যা সমাজকে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতে সহায়ক।

the POST’ কেন নিজেকে “মানুষের গল্পের ঠিকানা” বলে? কারণ, তারা মনে করে প্রতিটি ঘটনার কেন্দ্রে আছে মানুষ—তাঁদের হাসি, কান্না, সাফল্য ও সংগ্রাম। বেশিরভাগ প্রচলিত সংবাদমাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করা হয়—নির্দিষ্ট সময় ও জায়গার মধ্যে কী ঘটেছে, তার ওপর সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন। কিন্তু ঐ প্রথাগত কাঠামোতে মানুষ ও তাঁর জীবনকথা অনেক সময় আড়ালেই রয়ে যায়। ‘the POST’ ঠিক এই আড়ালে থাকা মানুষের দিকে আলো ফেলতে চায়।

the POST’ কেবল তথ্য জানানোর মধ্যে আটকে থাকে না; বরং গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে মানুষকে রাখে। তারা অনুসন্ধান করে কোন স্বপ্ন মানুষকে তাড়িত করে, কীভাবে মানুষ পথে চলে, কী বিড়ম্বনা অতিক্রম করে, এবং কোথায় গিয়ে তাঁর সাফল্য বা ব্যর্থতার গল্প মিলিত হয়।

বর্তমান বিশ্বে তথাকথিত “ইনফরমেশন সুনামি” চলছে। সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন নিউজ সাইট—সব মিলিয়ে মাত্র এক ক্লিকেই হাজার হাজার সংবাদ ও কন্টেন্টের সঙ্গে পরিচয় ঘটছে আমাদের। এই মহামারির মধ্যে বাস্তব-অবাস্তব, সত্য-মিথ্যার সীমানা কখন যেন ঘোলাটে হয়ে যায়। অনেক সংবাদ মাধ্যম আবার শুধুমাত্র দ্রুততার প্রতিযোগিতায় নামে, ফলে খবরের গভীরতা বা গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়।

এ পরিস্থিতিতে আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, গণমাধ্যমের প্রধান দায়িত্ব হলো মানুষের কাছে নির্ভুল ও সত্য তথ্য পৌঁছে দেওয়া, যাতে করে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সিদ্ধান্তগুলো সঠিকভাবে নেওয়া যায়। ‘the POST’ এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেই খানিকটা ইতিবাচকতা নিয়ে হাজির হতে চায়।

যখন কোনো প্ল্যাটফর্ম মানুষকে প্রকৃত তথ্যের পাশাপাশি তাঁর সামগ্রিক প্রেক্ষাপট জানায়, তখন সেই তথ্যের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ে। মানুষের ভাবনায় স্বচ্ছতা আসে। গল্প যখন সত্য ও মানবিক উষ্ণতায় মোড়ানো থাকে, তখন পাঠকও অনুভব করেন—“এটি আমার দেখা বাস্তবতারই প্রতিফলন।” আর এভাবেই গণমাধ্যমের ওপর হারানো বিশ্বাস আবারও গড়ে উঠতে পারে, সমাজে ইতিবাচক রূপান্তর দ্রুততা পেতে পারে।

অনেক সময় আমরা দেখি, নেতিবাচক ঘটনা, সহিংসতা অথবা দুঃসংবাদের মধ্যে আটকে থাকতেই গণমাধ্যম বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে—কারণ সেগুলো দিয়ে “সেন্সেশন” তৈরি করা তুলনামূলক সহজ। কিন্তু মানুষের জীবনে তো কেবল নেতিবাচকতার সম্মিলন না। এখানে আছে আশা, অর্জন, সাফল্যের উল্লাস ও আনন্দও। ‘the POST’ সেই ইতিবাচক গল্পগুলো খুঁজে বের করতে চায়

the POST’ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ আছে। সাধারণত একমুখী তথ্যপ্রবাহে মানুষ খবর পড়ে মন্তব্য করে বসে থাকেন, কিন্তু কোনো প্রভাব ফেলতে পারেন না। অন্যদিকে, ‘the POST’ পাঠকদের প্রতিক্রিয়া ও মতামতকে সাদরে গ্রহণ করে এবং তা পরবর্তী কন্টেন্ট তৈরিতে যুক্ত করে। এতে করে পাঠকেরা গল্পের অংশীদার বনে যান, শুধুমাত্র বাহ্যিক পর্যবেক্ষক নয়।

এভাবেই সংবাদ ও গণমাধ্যম এক নতুন বন্ধনের সূচনা করতে চায় পোস্ট—যেখানে পাঠকরাও হয়ে ওঠেন গল্পের Narrator বা ভাষ্যকার, তাঁদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি শেয়ার করেন। এটি শুধু গণমাধ্যমকেই সমৃদ্ধ করবে না, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজের ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশ ঘটাবে। সবাই অনুভব করবে—“সংবাদ মানেই কোথাও দূরের একটা চ্যানেল বা প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা ঘোষণা নয়, বরং আমাদেরই গল্প, যেখানে আমরাও কথা বলতে পারি।”

বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনে ‘the POST’ ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে চায়। তারা ভিজ্যুয়াল, ন্যারেসন, এক্সপ্লেইনারি, এডিটরিয়াল, লেখালেখি, ফিচার, ডকুমেন্টারি—নানা মাধ্যমে মানুষের গল্প তুলে ধরে, যেখানে আবিষ্কার করা যায় বাস্তব জীবনের রং ও আলো-আঁধারের এক গভীর সৌন্দর্য। এই নিউ মিডিয়া কেবল তথ্য সরবরাহ করবে না বরং মানুষের মধ্যে মানবিক সংযোগ ঘটাতে চেষ্টা করে।